শিরোনাম

টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার

 প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন   |   ফেব্রিক্স

টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার

আধুনিক উৎপাদনশীল বিশ্বে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প যে বিষয়গুলো নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তার মধ্যে রয়েছে দক্ষতা, টেকসই ও ক্লায়েন্টের চাহিদা অনু্যায়ী দ্রুততার সঙ্গে  সাড়া দেওয়া। শিল্প বাস্তুতন্ত্র, বৈশ্বিকভাবে টেকসই ব্যবসায়ের প্রবণতা এবং ভোক্তাচালিত অর্থনীতি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও  উদ্ভাবনী হতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ প্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহকরা পরিবেশ সচেতন এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যের জন্য অর্থ খরচ করতে বেশি আগ্রহী। যার ফলে টেক্সটাইল ও পোষাক শিল্পকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ত্রিমুখী পদ্ধতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে খুবই কৌশলের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলোর পক্ষে কেবল সেরা পণ্য এবং সময়মতো সরবরাহ করা নয়, দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

কয়েকটি পরীক্ষামূলক ফল দিয়ে এটা প্রমাণিত যে শিল্প সরঞ্জামে বিনিয়োগের চেয়ে প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের ফলে প্রাপ্ত লাভ অনেক বেশি। ট্রিউয়ের মতে, ইন্ডাস্ট্রির ৪.০ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি), রোবটিকস, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ক্লাউড প্রযুক্তি একীভূত করতে প্ররোচিত করে। উন্নত ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্থায়িত্ব অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অটোমেশন ও ডিজিটালাইশেন খেকে প্রাপ্ত বিশাল উপাত্তকে প্রয়োজনীয় তথ্যে রূপান্তর করতে না পারলে টেকসই অর্জন করা সম্ভব নয়।

বিশ্ব বাজারে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে উৎপাদন পরিকল্পনা, চাহিদা ও পণ্য বিক্রির পূর্বাভাস, সরবরাহের ধারা পরিচালনা, দ্রুত পণ্য বাজারজাতকরণ এবং ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্টের জন্য এ জাতীয় বিশাল পরিমাণের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য।

আধুনিক শিল্প বিপ্লব কয়েকশো বছর ধরে চলেছিল। এখন ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ যুগ শুরু হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ ধারণাটি মূলত ২০১১ সালে জার্মানদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবনা করা হয়েছিল।  ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ -এর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হল সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম (সিপিএস), যার মূল ভূমিকা   সক্রিয় এবং গতিশীল উৎপাদন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। পুরো শিল্প ব্যবস্থাকে কার্যকর করে তোলার লক্ষ্যে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ -তে সিপিএস কে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ –তে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি), রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), ক্লাউড কম্পিউটিং, অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং মেশিন লার্নিংসহ অনেক প্রযুক্তি এবং সহযোগী সিস্টেম রয়েছে।  সাম্প্রতিক সময়ে আইওটির আবির্ভাব একাধিক প্রযুক্তির মধ্যে আন্তসংযোগ সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে উন্নত পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আইওটিতে ফ্যাশন ডিজাইন, উন্নয়ন, উৎপাদন, টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে।  আইওটি সেন্সরগুলো শুধু কাপড় নয়, এর পাশাপাশি কাপড় উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মেশিনে স্থাপনের মাধ্যমে যন্ত্র ট্র্যাকিং করার কাজে লাগানো যায়। আইওটি টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল’র সমগ্র উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সরবরাহের ধারা দৃশ্যমান করতে গূরুত্বপূর্ণ বাস্তব তথ্যকে সমন্বয় করে। আইওটির সংযুক্ত ডিভাইসগুলো প্রতিদিন বড় ডেটা সেট তৈরি করে। যা রূপান্তরিত হয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে পরিণত হয়। এই পরিস্থিতি আরও ভালভাবে তথ্য বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি সংস্থাকে বিআইএস গ্রহণ করতে পরিচালিত করে। বর্তমানে পোশাক ব্যবসায়ীদের কাছে খুবই পছন্দের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্লকচেইন। কারণ তারা সহজেই মুহূর্তের মধ্যেই ফাইবার সরবরাহকারী থেকে শুরু করে উৎপাদক, পরিবহনকারী এমনকি খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন। এছাড়া ব্যবহৃত কাঁচামাল ও উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে পণ্যের টেকসই ট্র্যাক করা যায়। ব্লকচেইন ব্র্যান্ড এবং গ্রাহকদের মধ্যে ব্যবধান কমিয়েছে। এখন যেকোনও ব্র্যান্ডযুক্ত পণ্যের সততা খুচরা বিক্রেতা এবং গ্রাহক উভয়ের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। ব্র্যান্ডগুলো বিক্রয় এবং রয়্যালটি প্রদানের উপর নজর রাখতে পারে যার মাধ্যমে নকল পণ্য নির্মূল করা সম্ভব। ব্লকচেইন পোশাক শিল্পে আমূল পরিবর্তন আনছে এবং ভোক্তারা এটা পছন্দও করছেন। সরবরাহ থেকে ডিমান্ড চেইন -ব্লকচেইন এর বিচরণ সর্বত্র।

এআই উদ্ভাবনের মাধ্যমে দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি বিকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। এআই’র ধারণাটি কিছু মৌলিক ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে যেমন শনাক্তকরণ, পর্যবেক্ষণ, পরিদর্শন, গ্রেডিং, পুর্বাভাস ইত্যাদি। সাধারণত এসব কাজ ক্লান্তিকর হয়ে থাকে যার ফলে প্রায়ই কর্মীদের কাছ থেকে অস্পষ্ট ফল আসে। বিভিন্ন শ্রেণিবদ্ধ প্রযুক্তির সাহায্যে এআই মৌলিক কাজগুলোর দক্ষতা ও নির্ভুলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে এআইয়ের প্রয়োগ এখনও ব্যাপক নয়, এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও। তবে নিজেদের টেক্সটাইলে বিদ্যমান জটিল সমস্যা নিরূপনে উন্নত দেশে বিশেষ করে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করছে।