শিরোনাম

পোশাকশিল্পের আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখতে হবে

 প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ অপরাহ্ন   |   ফেব্রিক্স

পোশাকশিল্পের আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখতে হবে

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাস বেশ পুরোনো হলেও এটি ব্যাপকভাবে উন্নতি পেতে শুরু করেছে '৮০-র দশকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পোশাকশিল্পের গুরুত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মূল শক্তি এর কম উৎপাদন খরচ ও দক্ষ শ্রমশক্তি, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

১৯৮০ সালে প্রথম বৈদেশিক বাজারে পোশাক রপ্তানি শুরু হয়। প্রথমদিকে, শুধু কাঁচামাল এবং বেসিক পোশাক রপ্তানি করা হতো। তবে ১৯৯০ এর দশক থেকে দেশের পোশাকশিল্পের আধুনিকায়ন শুরু হয়। তৎকালীন সরকার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন এবং বিভিন্ন সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা দেশের পোশাকশিল্পকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। ২০০০ সালের পর পোশাক শিল্পে ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং ডিজাইন দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদিত পোশাক গ্রহণ করতে শুরু করে।

বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিত। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক কিনে থাকলেও টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার এর চাহিদাই সবচেয়ে বেশী। 

২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছিল। এই ঘটনার পর সরকারের নীতি এবং পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু শ্রমিক অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এখনও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন ভিয়েতনাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। পোশাক উৎপাদনে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ ও জল দূষণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই বিষয়টি বর্তমান সময়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, বিশেষ করে "সাস্টেইনেবল ফ্যাশন" বা টেকসই ফ্যাশনের কথা বলা হচ্ছে। যদি দেশে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা, ডিজাইন এবং ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে পারলে বাংলাদেশ পোশাকশিল্পের ভবিষ্যত বেশ উজ্জ্বল।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে এই শিল্প আরও উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পোশাকশিল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অটোমেশন ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও দ্রুত ও দক্ষ হতে পারে। সরকার, শিল্প উদ্যোক্তারা এবং শ্রমিকরা একযোগে কাজ করলে এদশের পোশাকশিল্প অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

পোশাকশিল্প দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানি দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে এটি ব্যাপক গুরুত্ব ধারণ করে। তবে পরিবেশগত, সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করতে শিল্পটির নতুন দিগন্ত উন্মোচন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।