কেন বাংলাদেশের মানুষ ভাত বেশি খায়?

বিশ্বের যেসব দেশের মানুষজন ভাত খায় সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ দ্বিগুণ ভাত খায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২০০ গ্রাম চাল খায়। কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রতি গড়ে চাল খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ৪০০ গ্রাম।
বাংলাদেশকে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য দেয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। একটি এলাকার মানুষের প্রধান খাবার কি হবে তা নির্ভর করে ওই অঞ্চলের আবহাওয়াগত কারণে যে খাদ্য বেশি উৎপাদন হয় তার উপর।
আবহাওয়া ও ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই ধান চাষের জন্য খুব উৎকৃষ্ট জায়গা। পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ধান চাষ হয়। সারা বছর জুড়ে নানা জাতের ধান হয়। তাই বাংলাদেশের মানুষ ভাত বেশি খাবে সেটাই স্বাভাবিক। একসময় পুরোটাই কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে খাবারের অভ্যাস কৃষকের দ্বারাই তৈরি হয়েছে। কৃষকেরা কাজে যাওয়ার আগে দেখবেন সকালে ভরপেট ভাত বা পান্তা ভাত খায়। তাকে সারাদিন রোদে বৃষ্টিতে কাজ করতে হয়। ভাত শরীরে প্রচুর এনার্জি দেয়। বেশিক্ষণ পেট ভরা থাকে। গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে। ভাতকে বলা হয় 'সুপার ফুড'। যারা প্রচুর কায়িক পরিশ্রম করে তাদের ভাত দরকার হয়। চালের প্রতিটি অংশ ব্যবহারযোগ্য। চাল দিয়ে ভাত ছাড়াও খিচুড়ি, বিরিয়ানি, পোলাও, পায়েস, ক্ষীর এরকম নানাবিধ খাবার তৈরি করা যায়। চালের গুড়া দিয়ে হরেকরকম পিঠা তৈরি করা যায়। এমন বৈচিত্র্য বেশিরভাগ খাদ্য দ্রব্যের নেই।
বাংলাদেশের মানুষ কেন বেশি ভাত খায় এর সাথে অবশ্যই দারিদ্রের সম্পর্ক রয়েছে। বেশি কম খাওয়াটা বিষয় নয়। যে জিনিসটা সবচেয়ে সহজে কাছেই পাওয়া যায়, অল্প খরচে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় সেটিই মানুষ খাবে। ভাত বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজলভ্য খাবার। সেজন্যেই এখানকার মানুষ এটা খায়। আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে পুষ্টিকর সুসম খাদ্য খাওয়ার সামর্থ্য সবার থাকে না। পেট ভরার জন্য বিকল্প খাবার যদি সে কিনতে পারতো তাহলে সে নিশ্চয়ই খেত। গ্রামে টাকা থাকলেও অনেক সময় পুষ্টিকর খাবার পাওয়া সহজ নয়। কারণ তা বেশি দামে বিক্রির জন্য শহরে চলে আসে। যেকোনো একটি খাবারের উপরে নির্ভরশীলতা হয়ে গেলে দাম যদি অনেক বেড়েও যায় তবুও অভ্যাসগত কারণে সেই খাবারটিই মানুষ কেনে। চালের ক্ষেত্রে সেটি হয়েছে। বাংলাদেশে সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে অনেক খাবার নষ্ট হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের পরিবারে প্রচুর খাবার অপচয় হয়।
পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর ভাতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন-বি ইত্যাদি পুষ্টিকর খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে শর্করা কমে যায়। হয়ত এসব কারণেই বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিকেরা ভাত বেশি খায়। ভাত বেশি খেলে, শরীরের জন্য দরকারি অন্যান্য ধরনের খাবার কম খেলে বা না খেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হয়। মূল সমস্যা অপুষ্টি যা বাংলাদেশে উচ্চহারের রয়েছে। তিরিক্ত ভাত খেলে খাবার হজম হতে সময় লাগে, শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ভাত শরীরে আয়রন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ভাত রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য তাই ভাত সীমিত হওয়া উচিৎ। অতিরিক্ত ভাত খেলাম কিন্তু সারাদিন কিছু করলাম না তাহলে শরীরে শর্করা ক্ষয় হবে না। দেখবেন কৃষক, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক এরা প্রচুর ভাত খায় কিন্তু এদের পেটানো শরীর হয়ে থাকে। কারণ তারা কায়িক পরিশ্রম করে। অতএব ভাতের কোন দোষ নেই। দোষটা আপনার, আমার।