শিরোনাম

আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের প্রতিভা ও কর্মে উদ্ভাসিত

 প্রকাশ: ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন   |   মতামত

আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের প্রতিভা ও কর্মে উদ্ভাসিত

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের দক্ষতানির্ভর বাংলাদেশ, যেখানে তরুণরা তাদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে রাষ্ট্রকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। তরুণদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সাহসী তরুণদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়েও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে তরুণরাই। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে তা ব্যাপক রূপ ধারণ করে।

বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। যার ফলাফল স্বৈরাচারের পতন এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ তরুণ। ফলে আগামীর বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি—সবই নির্ভর করছে তরুণসমাজের ওপর।

তারুণ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে গড়ে তুলতে হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ।

জাতির মেরুদণ্ড হলো শিক্ষা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। মুখস্থ ও চাকরিনির্ভর পড়াশোনা থেকে বেরিয়ে এসে বুদ্ধিদীপ্ত, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি।

পূর্ণাঙ্গভাবে মনোযোগ দিতে হবে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায়। প্রণোদনা বাড়াতে হবে গবেষণা খাতে। আগামীর বাংলাদেশের সমাজ হতে হবে পুরোপুরি জ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যভিত্তিক। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের।

আগামীর বাংলাদেশ হবে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিমুক্ত। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। ফলে জনগণের জন্য হবে সংবিধান; সংবিধানের জন্য জনগণ নয়। সমতার ভিত্তিতে একটি প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে একটি স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যার মূলে থাকবে জনগণের কল্যাণ। সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে সুধীসমাজকে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ সামাজিক সমস্যা সমাধান এবং জনমত সংহত করার ভূমিকা পালন করতে হবে সুধীসমাজকে। আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে সবার জন্য নিরাপদ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর দ্রুত সমাধানে কাজ করতে হবে।

 দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় কোনো দল বা ব্যক্তির হস্তক্ষেপ হতে দেওয়া যাবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। ভোট প্রয়োগের অধিকার জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের হাতিয়ার। ফলে নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক। এর গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানে পরিবর্তন প্রয়োজন, যেন সংবিধান ব্যবহার করে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ না থাকে। সংবিধানকে শুধু জনগণের করে তুলতে হবে, যেখানে থাকবে শুধুই জনগণের কল্যাণ। ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধান সংস্কারের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতা এমনভাবে বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন ক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না থাকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নজর দেওয়া প্রয়োজন। রাজস্বনীতি, করনীতি, ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও সংস্কার প্রযোজন। পোশাকশিল্পের বাজার সম্প্রসারণ এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয়ের পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে। দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে প্রযুক্তিতে দক্ষ করে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখে দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন দেশ গড়ে তুলতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় রেখে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

আগামীর বাংলাদেশ হবে শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশে থাকবে না কোনো অসাম্য ও বৈষম্য, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার মৌলিক অধিকার তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ পাবে। প্রত্যেকে তার উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের প্রতিভা ও কর্মে উদ্ভাসিত। 

লেখক: শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


মতামত এর আরও খবর: