দেশের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে জেলে কাটাচ্ছেন ডেসটিনির এমডি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন

দেশের ২০০৯ সালের বিদ্যমান আইনে অর্থ পাচার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান ছিল ৭ বছরের জেল। আর ২০১২ সালের বিধানে মেয়াদ ১২ বছর। অথচ ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন মামলায় ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের এম ডি রফিকুল আমীন বিগত ১২ বছর ৩ মাস ধরে বিনা বিচারে জেলে কাটাচ্ছেন। অজ্ঞাত কারনে এখন পর্যন্ত ন্যায় বিচার পাননি তিনি, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় বিরল এক নেতিবাচক দৃষ্টান্ত।
তথ্য ঘেটে দেখা যায়, ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের নামে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে মর্মে রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনির ট্রি প্লান্টেশনের চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান লে: জেঃ (অব) হারুন-অর- রশিদ এবং ডিসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা ও শেয়ার হোল্ডারের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩০ শে জুলাই কলাবাগান থানায় মামলা করে দুদক। এই মামলা থেকে আগাম জামিন পেতে উপরে উল্লেখিত তিন আসামী মহানগর দায়রা জজ আদালতে একই বছর ১১ই অক্টোবর গেলে বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। এর কিছুদিন পর কারান্তরীন অভিযুক্ত আসামীরা বার বার জামিন আবেদন করলেও আজ অবধি তাদের জামিন মেলেনি। এদের মধ্যে কেবল সাবেক সেনা প্রধান হারুন-অর- রশিদ জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য ডেসটিনি ট্রিপ্লান্টেশন অর্থ আত্মসাত যে ধরনের মামলা, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে ১২ বছর। কিন্তু দুই আসামী রফিকুল আমীন এবং মোহাম্মদ হোসেন বিনা বিচারেই ১২ বছর ২ মাসেরও বেশী সময় ধরে কারাগারে আটক আছেন। বিনা বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তির চেয়েও বেশি দিন কারাগারে থাকা যে কোনো মামলায় এক নজির বিহীন ঘটনা।
বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অনেকবার উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য দারস্থ হলেও অজ্ঞাত কারণে জামিন মেলেনি। জানা গেছে, এই মামলার কলকাঠির সাথে জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা জে: তারেক সিদ্দিকীগংদের ইশারায় বারবার ন্যায় বিচার বঞ্চিত হন রফিকুল আমীনসহ আসামীদ্বয়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি অর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে ডেসটিনির ৪৫ লাখেরও বেশি ডিস্ট্রিবিউটর ও শুভাকাঙ্খীদের প্রত্যাশা ছিলো রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেনের ন্যায় বিচার পাওয়ার। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে তাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় কয়েকবার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলেও জামিন মেলেনি।
সব শেষ গেল ২৮শে অক্টোবর এই মামলার রায়ের দিন ধার্যছিলো। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম এদিন সকাল সাড়ে দশটায় রায় ঘোষণার জন্য নিজ কক্ষে আসেন। এ সময় তিনি রায় না দিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন ২০২৫ সালের ১৫ই জানুয়ারি। বিচারকের নতুন তারিখ ঘোষণার বিষয়ে এই মামলার আসামীপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি গণমাধ্যমকে জানান, 'বিচারক জানিয়েছেন এই মামলাটির রায় এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। সেজন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন'। তবে রায় পেছানো নিয়ে এদিন দুদকের আইনজীবীর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিন মামলার রায় ঘোষণা হবে বলে আদালত প্রাঙ্গনে হাজির হন ডেসটিরি অসংখ্য গ্রাহক। তবে রায় না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। নতুন নির্ধারিত তারিখে আসামীপক্ষ ন্যায় বিচার পাবেন বলেও প্রত্যাশা করেন ডেসটিনির বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে দুদকের দায়ের করা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই মামলায় কী ন্যায় বিচার পাবেন না অভিযুক্তরা? ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে এই মামলার ন্যায় বিচার সবার প্রত্যাশা।দেশের আইনের সর্বোচ্চ শাস্ত্রি মেয়াদেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে জেলে কাটাচ্ছেন ডেসটিনির এমডি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।