সাম্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি চান সশস্ত্র বাহিনীর সাবেকরা

আগরতলায় সহকারী হাই কমিশনে হামলাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত প্রশ্নে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীত’ থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর একদল সাবেক সদস্য। শনিবার মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের সামনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। পরিষদের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেছেন, “আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, সাম্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি চাই। কোনো ধরনের নতজানু নীতিকে কোনো অবস্থাতেই আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেব না।”
ভারতের জনগণের উদ্দেশে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “আপনাদের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নাই; আপনারা আমাদের বন্ধু। কিন্তু ভারতের গেরুয়া পোশাকধারী হিন্দু আধিপত্যবাদকে আমরা কোনোভাবেই এদেশে প্রশ্রয়-আশ্রয় দিতে রাজি নই।”
বাংলাদেশে সনাতনী হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। গত সোমবার এমন একটি বিক্ষোভ থেকে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়। সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটে বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ মন্তব্য করে ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব কূটনৈতিক মিশন ও সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
এর আগে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের সামনের বিক্ষোভে জাতীয় পতাকা পোড়ানো এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। এ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে মহাখালীতে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা আহসানুল্লাহ বলেন, “হযরত শাহজালাল, হযরত শাহ মখদুম, অতীশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্য, অনুকূল ঠাকুর, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখের আবাসভূমি এই বাংলাদেশ। আমরা যুগ যুগ ধরে এই শ্যামলভূমিতে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি।
তিনি বলেন, “তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল আগরতলা এবং কলকাতার বাংলাদেশি দূতাবাসে আক্রমণ চালানো এবং আমাদের বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করা। আমরা এই সমস্ত ঘটনাগুলিকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্ভভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করছি। এছাড়া ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে সার্বক্ষণিক বিষোদগার করে চলেছে।
কর্মজীবনের শুরুতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে শপথ নিয়েছিলেন, অবসরে গিয়েও সেই শপথ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ‘বিচ্যুত’ হননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আসুন, সবধরনের রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে গিয়ে ধর্ম-মত ও দলের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করি।”
এ ক্ষেত্রে দেশের তরুণ ছাত্র এবং শ্রমিক জনতাকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের তাগিদ দিয়ে আহসানুল্লাহ বলেন, “আপনাদের আরও আশ্বস্ত করতে চাই, সশস্ত্র বাহিনীর লাখ লাখ প্রশিক্ষিত সৈনিক, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত অফিসার- সবসময় এদেশের জনগণের পাশে ছিলাম, আমরা থাকব। আমরা যেকোনো প্রয়োজনে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিকসহ যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হবে; আমরা আপনাদের সকলকে সাথে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে চাই।”
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা তুলে ধরে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ান বলেন, “আজ পুনরায় আবার এখানে জমায়েত হয়েছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখার জন্য। মোদীজি, অমিতজি এবং রাজনাথজি, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন, ’৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যেকোনো শত্রু মোকাবেলায় প্রস্তুত।
সমাবেশ শেষে বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাওয়া ক্লাব থেকে শুরু হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংলগ্ন ক্রসিং হয়ে ঘুরে আবার রাওয়া ক্লাবে এসে শেষ হয়।