শিরোনাম

শিক্ষক নেটওয়ার্ক সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতির দাবি

 প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন   |   ক্যাম্পাস

শিক্ষক নেটওয়ার্ক সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতির দাবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ নয়, পদচ্যুতির দাবি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব এ দাবি করেন। রোববার (৯ মার্চ) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এই প্রতিবাদ সমাবেশে’ থেকে এই দাবি করা হয়। সমাবেশে ঢাবি শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, আমি গত চার মাস থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছি। এখন আমি তার পদচ্যুতি চাই। আর আইন উপদেষ্টা! উনারা দুইজন কি করছেন? আমরা কেন একটি জবাবদিহিমূলক সরকার পাচ্ছি না?  তিনি বলেন, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই বলবো না, আমরা বলবো ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সেটা ফাঁসি হবে নাকি জনসমক্ষে অন্যকিছু করা হবে সেটি পরে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেগুলো নিশ্চিত করতে পারছে না কেন? তাহলে স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আমরা কোনদিকে এগুলাম?  তাসনিম সিরাজ বলে, আমাদের দুইজন নারী উপদেষ্টা আছেন। তারা কি আদৌ আছেন? দেশে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে উনারা কি সচেতন? আজ ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। আমরাও সেটি মানতে চাই যদি এই দেশে আইনের শাসন থাকে। আপনারা আমাদের বাধ্য করলে আমরা কি করব? আমাদের পিঠ তো দেয়ালের ঠেকে যাচ্ছে।

যে দেশ নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না সেই দেশ কি আমার দেশ? আমি কি এইরকম দেশ চাই? এই প্রশ্নও তোলেন অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ। সমাবেশের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী  নিপীড়নের প্রতিবাদে প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-

১. থানা থেকে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ও অভিযুক্তের পুনরায় ভিক্টিম নারীর সম্পর্কে অশালীন যৌন নিপীড়নমূলক বক্তব্য প্রচারে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিচার দাবি।

২. একদফা লাঞ্ছনার শিকার এই নারী শিক্ষার্থী যাদের দ্বারা অধিকতর বুলিং আর সাইবার আক্রমণের শিকার হলেন, ধর্ষণ-হত্যার হুমকি পেলেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা।

৩. এই মব তৈরি করে নারী অমর্যাদাকে বীরত্ব বলে প্রতিষ্ঠিতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার।

৪. যৌন নির্যাতন এবং নৈতিক পুলিশের দায়ে অপরাধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে তাকে বরখাস্ত করা।

সমাবেশে অংশ নিয়ে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধর্ষণের শাস্তির বিধান। আমরা পুলিশ ভয় পাই না। র‍্যাব বা আর্মিকে ভয় পাই। কারণ তারা ধরে একদম শাস্তি দেয়। ক্রসফায়ার করা হয়। সুতরাং যারা ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন করে তাদের বিরুদ্ধে এরকম একটি বাহিনী গঠন করা হোক। এরকম কোনো আইন করা হোক যেন চাক্ষুষ দৃষ্টান্তমূলক এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। যেই শাস্তিটা ধর্ষকদের মনে ভয় সৃষ্টি করবে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, একজন দুর্বল পুরুষও তার বাসায় নির্যাতক হয়ে দাঁড়াতে পারে। নির্যাতকরা যখন যেদিকে সুবিধা পায় তারা সেটি ব্যবহার করে। তাই আমি কোনো নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে দোষ দিতে চায় না। আমি সবাইকে দোষ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আপনারা যতক্ষণ না স্বীকার করবেন নির্যাতনের মনোবৃত্তি আপনারা মাইক্রো লেভেলে গৃহে বা সমাজে টিকিয়ে রাখছেন এবং কীভাবে এটি টিকিয়ে রাখা হয়- এটির বিরুদ্ধে যদি আপনি না দাঁড়ান তাহলে আপনি অন্য কাউকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। কারণ আপনি হয়ত ওই মুহূর্তে নির্যাতন করছেন না কিন্তু আপনি একটা নির্যাতক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত, একটা অংশ। অধ্যাপক গীতি আরা আরও বলেন, এখানে নিজের দায় অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এটা ঠেকাতে হবে প্রত্যেককে। ঘর থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত যারা দায়িত্বে আছে তাদেরকে এটি ঠেকাতে হবে। নারী, অন্যান্য লিঙ্গ এবং দুর্বলের ওপর নির্যাতন এগুলো রুখে দাঁড়ালে ঠেকানো যায়। আমরা তো জুলাইয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছি। নতুন বাংলাদেশ যেই উদ্দেশ্যে হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। শিক্ষক নেটওয়ার্কের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি স্পর্শকাতর অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে কেন মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের কাছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিরত তাই এ বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নির্যাতন দমন সেলে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যেত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী শাস্তির প্রক্রিয়ায় যাওয়া যেতো যে প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হচ্ছে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা। সে পথে না গিয়ে তড়িঘড়ি করে এই ধরনের মামলা, গ্রেপ্তার, চাকুরি থেকে ছাঁটাই এগুলো অনেকের কাছেই অতিপ্রতিক্রিয়া মনে হয়েছে এবং যা এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে উসকে দিতে প্রণোদনা হিসেবে হিসেবে কাজ করেছে বলে আমরা মনে করি। সমাবেশ থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থী নওরীন সুলতানা তমা। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কাজী মারুফুল ইসলাম, ফাহমিদুল হক, স্বপন আদনান, কিশোয়ার জাহান, সেলিম রায়হান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুস্তাকিন বিল্লাহ ও নাফিসা, সংস্কৃতিকর্মী সুস্মিতা রায় ও ফেরদৌস আরা রুমি।

ক্যাম্পাস এর আরও খবর: