মহাকাশে ২৮৬ দিন কী খেয়ে ছিলেন সুনিতা ও বুচ

নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর দীর্ঘ ২৮৬ দিন পর পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। আজ বুধবার ভোররাত ৩টা ৫৭ মিনিটে (আইএসটি) ফ্লোরিডার উপকূলে তাঁদের নিয়ে স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানটি অবতরণ করে। মাত্র আট দিন থাকার জন্য গত বছরের জুন মাসে সুনিতা ও বুচ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের (আইএসএস) উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানের ত্রুটি এবং বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাঁদের দীর্ঘদিন আইএসএসে আটকে থাকতে হয়। এত দিন ধরে তাঁরা কী খেয়ে নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করেছিলেন, তা জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকেরই। পৃথিবী থেকে ৪০৯ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)। প্রায় ২৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহাকাশচারীদের জন্য হোস্ট হিসেবে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রধানত এই বিশাল গবেষণাগার পরিচালনা করে থাকে, যা বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
উইলমোর ও উইলিয়ামস দুজনেই নেভি টেস্ট পাইলট ছিলেন এবং পরবর্তীতে নাসায় যোগ দেন। তেনেসির হাই স্কুল এবং কলেজ ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন ৬২ বছর বয়সী বুচ উইলমোর এবং ম্যাসাচুসেটসের নিডহামের একজন প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারু ও দূরপাল্লার দৌড়বিদ ছিলেন ৫৯ বছর বয়সী উইলিয়ামস। তাঁরা দুজনেই ছিলেন অভিজ্ঞ আইএসএস ক্রু সদস্য, যাঁরা তাঁদের মিশনের জন্য পুনরায় মহাকাশ প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন বুচ ও সুনিতা। মহাকাশে মাসের পর মাস থাকার ফলে তাদের বিভিন্ন শারীরিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন: মাংসপেশি ও হাড়ের ক্ষতি, দেহের তরল পদার্থের পরিবর্তন, কিডনিতে পাথর, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা এবং পৃথিবীতে ফিরে এসে স্বাভাবিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের মতো চ্যালেঞ্জ।
২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বরের এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, নাসার মহাকাশচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পিৎজা, চিকেন রোস্ট ও ঝিনুকের ককটেল খাচ্ছিলেন।
মহাকাশে তাঁদের খাবারের মধ্যে ছিল—
বোয়িং স্টারলাইনার মিশনের সমস্যার কারণে তাদের তাজা ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ সীমিত ছিল। শুরুর দিকে তাদের খাদ্যতালিকায় তাজা ফল থাকে। তিন মাস পার হওয়ার পর সেগুলো শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্যাকেটজাত বা ফ্রিজ-ড্রাইড খাবার খেতে থাকেন। মহাকাশে ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, পাউডার মিল্ক, পিৎজা, চিকেন রোস্ট, ঝিনুক ককটেল ও টুনা ছিল। নাসার মেডিকেল টিম মহাকাশচারীদের ক্যালরি গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করত।
সব মাংস এবং ডিম আগে থেকেই পৃথিবীতে রান্না করা হতো এবং মহাকাশে গরম করে খেতে হতো। স্যুপ, স্টু (সাধারণত মাংস, শাকসবজি এবং অন্যান্য উপকরণ একসঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সেদ্ধ করে তৈরি খাবার) এবং ক্যাসেরোল ধরনের (মাংস, শাকসবজি, শসা, পাস্তা, চিজ, সস ইত্যাদি একত্রিত করে তৈরি খাবার) খাবারগুলোতে পানি যুক্ত করে পুনরায় খাওয়ার উপযোগী করা হতো। এই পানি আইএসএসের ৫৩০ গ্যালন পানির ট্যাংক থেকে নেওয়া হতো। এ ছাড়া মহাকাশে মহাকাশচারীদের প্রস্রাব এবং ঘাম পুনর্ব্যবহার করে বিশুদ্ধ পানি তৈরি করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, খাবারের অভাবে মহাকাশচারীদের ওজন কমেনি। তারা জানিয়েছিলেন, আইএসএসে প্রত্যেক মহাকাশচারীর জন্য দিনে ৩ দশমিক ৮ পাউন্ড খাবারের সরবরাহ থাকে। এ ছাড়া অপ্রত্যাশিতভাবে মিশনের সময় বাড়ার জন্য অতিরিক্ত খাবারও সরবরাহ করে রাখা হয়।