বিসিএসের ফরম জমা দিতে গিয়ে পুলিশে চাকরি পান এসআই রুনা

কঠোর মনোবল ও ইচ্ছাশক্তি যেকোনো মানুষকে নিয়ে যেতে পারে সাফল্যের শিখরে। নারীরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে দেশসেবায় অবদান রেখে চলেছে। নারীরা এখন আর অবহেলিত নয়, সমাজের বোঝা নয়। নারীরা তাদের কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে যেকোনো পেশায় তারা পারদর্শী ও সফল। কথাগুলো বলছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনের রেলওয়ে থানায় কর্মরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রোকছানা পারভিন রুনা।
এসআই রুনা জানান, ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা ছিল এমন একটি পেশায় তিনি আত্মনিয়োগ করবেন যে পেশায় থেকে সরাসরি দেশের মানুষের সেবা করা যায়। সেজন্য তিনি পুলিশ ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন এমন চাকরির স্বপ্ন দেখতেন। পুলিশে যোগদানের সুযোগ পেয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বর্তমানে তিনি পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন।
দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রুনা সবার ছোট। বাবা নাটোরের লালপুরের গোপালপুর বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়াও নিজের জমিতে কৃষিকাজ করতেন। মা রত্না বেগম গৃহিণী। এছাড়া তার বড় বোন ফারহানা পারভিন হাফিজা নাটোরের জেলা আদালতের আইনজীবী, দুই ভাই ব্যবসা ও চাকরিতে কর্মরত আছেন।
রুনা ছোটবেলা থেকে দুরন্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিলেন। তার শৈশব কেটেছে গ্রামের প্রকৃতিঘেরা নির্মল পরিবেশে। পরিবারের লোকজন সামাজিক ও প্রগতিশীল হওয়ার কারণে স্বাধীনচেতা মনোভাবে সামাজিকভাবে বেড়ে উঠেছেন। লেখাপড়া করার পাশাপাশি সবরকম খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্কাউটিং, রোভার স্কাউট করার জন্য নিজেকে পরিচ্ছন্নভাবে গুছিয়ে রাখতেন। এছাড়া সাংস্কৃতিক চর্চা, গান, ও মঞ্চ নাট্য অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বিসিএস পরীক্ষার ফরম জমা দিতে তিনি রাজশাহীতে একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই রুনা জানতে পারেন, রাজশাহী কোর্ট এলাকার পাশেই উপপরিদর্শক (এসআই) পদে লোক নেওয়া হচ্ছে। তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হয়ে সরাসরি লাইনে দাঁড়িয়ে শারীরিক ফিটনেসে প্রাথমিকভাবে টিকে যান। পরে মৌখিক-লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ২০১২ সালে সারদা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে তাকে ট্রেনিং করতে পাঠানো হয়। সেখানে ট্রেনিং চলাকালীন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়। পুলিশ প্রশিক্ষণের কলাকৌশল রপ্ত করতে গিয়ে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে রুনা চাকরিতে যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগদান পর ২০১৪ সালে রাজশাহীর পুঁঠিয়া থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের ইয়াছিন মন্ডলের রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। রেলওয়ে স্টেশনে বা রেল পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে এসে কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম একটি বড় রেলওয়ে জংশন স্টেশন। প্রতিদিন শত শত যাত্রী এ স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। নানা পেশার মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা হয়। এখানে যাত্রীদের পাশাপাশি কিছু অসাধু মানুষও স্টেশনের চলাচল করে থাকে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি স্টেশন এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। বিশেষ করে কোনো নারী যাত্রী যদি সমস্যায় পড়ে আমার কাছে আসেন, আমি সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
নতুন প্রজন্মের নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রুনা বলেন, প্রতিটি সেক্টরে নারীরা সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। নারীরা সবই পারেন। নারী সংসার সামলায়, সন্তান সামলায়, নারী দেশের জন্য কাজ করে। এজন্য নারীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তার লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।