শিরোনাম

এবার হাইকোর্টের বিচারপতি হত্যা মামলার আসামি

 প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ অপরাহ্ন   |   আইন-আদালত

এবার হাইকোর্টের বিচারপতি হত্যা মামলার আসামি

এবার হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াতের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা এবং উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। যদিও তথাকথিত হত্যার ঘটনার দিন তিনি সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কোর্টে ছিলেন বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের ওই সিনিয়র আইনজীবী মো. মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, এই বিচারপতি বর্তমানে থাকেন কাকরাইল জাজেস কোয়ার্টারে, কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উত্তরায়। মিথ্যা বা ভুয়া মামলারও একটা সীমা, পরিসীমা আছে!’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতিকে আসামি করায় এভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করেন মো. মোতাহার হোসেন সাজু। যিনি নিজেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক অন্য একটি মামলার আসামি। বর্তমানে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। সাবেক এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) জানান, বিচারপতিকে আসামি করে হত্যা মামলাটি করা হয় গত ২২ আগস্ট (মামলা নং ৫)। মো. রাহাত হোসেন বিজয় নামের এক ব্যক্তি এই মামলা করেন। আর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দুটি করা হয় গত ২ সেপ্টেম্বর। মামলা দুটির নম্বর ৪ ও ৫। এই দুই মামলার বাদী যথাক্রমে মো. হাছেন আলী ও শাহরিয়ার মান্নান আসিফ।

মো. মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘হত্যার ঘটনা সঠিক কিন্তু অবশেষে মিথ্যা মামলার শিকার হলেন একজন সিটিং বিচারপতিও, এতে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন বা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদেরও সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ এই আশঙ্কার বিষয় সামনে এনে জানতে চাইলে হত্যা মামলার বাদী মো. রাহাত হোসেন বিজয় বলেন, আসলে পরে আমিও পড়ে দেখলাম মামলায় অনেক ভুল আছে। আমরা তো সবাইকে চিনি না। আন্দোলনের সময় অনেক মানুষ মারা গেছেন। সব মামলার ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার হয়েছে, আসামিদের একটা তালিকা ছিল সেখানে। সেটা আমাদের দেওয়া হয়েছে, তালিকা ধরে আমরা নাম দিয়েছি।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমার সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) জহিরুল ইসলাম শুভ একজন ইন্টেরিয়র শ্রমিক। তিনি টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের মসজিদে থেকে বিভিন্ন কাজ করতেন। গত ৫ আগস্ট বেলা আনুমানিক ৩টার সময় তিনি টঙ্গী থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা কর্তৃক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে আজমপুর মোড়ে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছালে আসামিরা কোটাবিরোধী আন্দোলনকে বানচাল করার লক্ষ্যে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ও গুলি ছুড়তে থাকেন। দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া একটি গুলি আমার সম্বন্ধির মাথায় লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

খিজির হায়াতের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী শাহরিয়ার মান্নান আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও কালচার ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, ‘আমি গত ১৮ জুলাই বেলা আনুমানিক ২টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করি। ওই দিন উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এ সময় কিছু ছাত্র ভাইয়েরা আমাকে উদ্ধার করে আরএমসি হাসপাতালে রেখে আসে। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শে থানায় এসে মামলা করি।’ আরেক বাদী মো. হাছেন আলী উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন রিকশাচালক ও সেই সঙ্গে দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। আমি গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাধারণ জনগণের সঙ্গে অংশগ্রহণ করি। এমতাবস্থায় আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এ সময় কিছু ছাত্র ভাইয়েরা আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে রেখে আসে। সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে পরবর্তী ২১ আগস্ট রিলিজ পাই। বর্তমানে আমি বাসায় চিকিৎসাধীন। আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে মামলা করি।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক বিভিন্ন হত্যা মামলায় ঢালাও আসামি করার অভিযোগ আছে শুরু থেকেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকেও আসামি করা হয়েছে এসব মামলায়। তবে সিটিং বিচারপতিকেও হত্যা মামলার আসামি করার তথ্য এই প্রথম সামনে এসেছে। গত ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তাদের নাম প্রকাশ করেনি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। তবে যে বিচারপতিরা বেঞ্চ পাচ্ছেন না, বিচারপতি খিজির হায়াত তাদের মধ্যে অন্যতম।

সূত্র- খবরের কাগজ

আইন-আদালত এর আরও খবর: