শিরোনাম

হাড়ের সুই দিয়ে উত্তর আমেরিকানদের পোশাক

 প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন   |   পোষাক শিল্প

হাড়ের সুই দিয়ে উত্তর আমেরিকানদের পোশাক

কঠোর পরিবেশের সঙ্গে আদি মানুষরা কীভাবে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়েছিলেন সে সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে পারে এসব আবিষ্কার। প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে উত্তর আমেরিকার আদি মানুষরা কীভাবে ঠাণ্ডা পরিবেশে বেঁচে ছিলেন সে সম্পর্কে নতুন এক বিস্ময়কর প্রমাণ উন্মোচন করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। তাদের গবেষণা বলছে, হাড়ের তৈরি সুই দিয়ে পোশাক বানাতেন সেখানকার লোকজন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিং অঙ্গরাজ্যের এক স্থানে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, পশমওয়ালা প্রাণীদের হাড় থেকে সুই তৈরি করে পশুর পেল্ট বা চামড়া সেলাই করে নিজেদের পোশাক বানাতেন আদি মানুষরা। গবেষণার এসব আবিষ্কার প্যালিওলিথিক যুগে কঠোর পরিবেশের সঙ্গে আদি মানুষরা কীভাবে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়েছিলেন সে সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষণায় নেতৃত্বে দিয়েছেন ‘ওয়াইয়োমিং স্টেট আকির্ওলজিস্ট’-এর প্রত্নতাত্ত্বিক স্পেন্সার পেল্টন ও তার সহকর্মীরা। গবেষণাটি হয়েছে অঙ্গরাজ্যের ‘কনভার্স কাউন্টি’র ‘লাপ্রেল’ নামের প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটে। এ স্থানে সংরক্ষিত আছে কলম্বিয়ান ম্যামথের দেহাবশেষ, যা মানুষের মাধ্যমে মেরে ফেলা বা স্ক্যাভেঞ্জ করা হয়েছিল বলে ধারণা গবেষকদের। আদি বাসিন্দাদের দল বেধে বসবাসেরও প্রমাণ মিলেছে এ স্থানে। গবেষণায় আবিষ্কৃত বিভিন্ন নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে হাড়ের সুইয়ের টুকরা ও খরগোশের হাড় থেকে তৈরি পুঁতি। আমেরিকার প্রাচীনতম উপাদানকে চিহ্নিত করেছে পুঁতি এবং পোশাক বানাতে সুইয়ের ব্যবহার আদি মানুষদের উন্নত দক্ষতারই প্রতিফলন।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ। গবেষণার ফলাফলে জোরালো প্রমাণ মিলেছে যে, ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যই হাড়ের তৈরি সুই দিয়ে পোশাক বানাতেন আদিম মানুষরা। শিয়াল, ববক্যাট, পর্বতে বাস করা সিংহ, খরগোশ, এমনকি বর্তমানে বিলুপ্ত আমেরিকান চিতা’সহ বিভিন্ন পশমওয়ালা প্রাণীর হাড় থেকে সুই তৈরি করতেন আদি মানুষরা। গবেষকরা বলছেন, ঠাণ্ডা পরিবেশে পরার জন্য প্রাণীর পশম বেশ আরামদায়ক। তাই পশমকে ভালভাবে সেলাই করে পোশাক বানানোর জন্যই হাড় থেকে তৈরি সুই ব্যবহার করতেন আদি মানুষরা। এসব পোশাক সম্ভবত সেলাই হত আঁটসাঁটভাবে, যা ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে আদি মানুষদের। ফলে উত্তর আমেরিকার মতো অঞ্চলের ঠাণ্ডা পরিবেশে বেঁচে থাকতে পেরেছিলেন তারা।

সুইয়ের এসব টুকরা উৎস শনাক্ত করতে ‘মাস স্পেকট্রোমেট্রি বা জুএমএস’ ও ‘মাইক্রো-সিটি’ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে প্রাণিপ্রত্নতত্ত্বের মতো উন্নত কৌশল ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। প্রাণীদের হাড়ের কোলাজেন বিশ্লেষণ করতে ও এর সঙ্গে প্যালিওইন্ডিয়ান যুগের পরিচিত প্রাণীদের তুলনা করতে গবেষকদের সহায়তা করেছে এসব পদ্ধতি। প্যালিওইন্ডিয়ান যুগ স্থায়ী ছিল সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১২ হাজার বছর আগে।

পোষাক শিল্প এর আরও খবর: