এটিএম নির্ভরতা কমিয়ে সিআরএম মেশিনে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো

দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এটিএম লেনদেন। কিন্তু বর্তমানে দিন দিন কমতে শুরু করেছে এটিএম বুথের সংখ্যা। তথ্য বলছে, গত বছরের জুনে মোট এটিএম বুথের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪৩৮টি। কিন্তু পাঁচ মাসের মাথায় অর্থাৎ নভেম্বর শেষে বুথের সংখ্যা কমে ১৩ হাজার তিনটিতে নেমেছে। ৫ মাসে ৪০৫টি এটিএম বুথ কমে গেছে। ব্যাংকের শাখায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে না দাঁড়িয়েই টাকা তোলা যায় এটিএম বুথ থেকে। তার পরও এটিএম বুথের সংখ্যা কেন কমছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এখন অনলাইন লেনদেনের জনপ্রিয়তা এটিএমের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তা ছাড়া ব্যাংকগুলো শুধু এটিএম-নির্ভরতা কমিয়ে সিআরএম মেশিনের দিকে গুরুত্ব বড়াচ্ছে। এতে ব্যাংকের অনেক সাশ্রয় হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির হালনাগাদ তথ্য বলছে, নভেম্বর শেষে ব্যাংকের সিআরএম মেশিনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৫১টি। কিন্তু পাঁচ মাস আগে এর সংখ্যা ছিল ৫হাজার ৬২৬টি। অর্থাৎ পাঁচ মাসে সিআরএম মেশিন বেড়েছে ১ হাজার ২২৫টি। সুতরাং এটিএম মেশিনের সংখ্যা কমলেও সিআরএম মেশিনের সংখ্যা বেড়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, এটিএম বুথের লেনদেন ও বুথের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। কারণ আগামীর ব্যাংকিং হবে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর। সবাই অনলাইনে লেনদেন করবে। দিন দিন অনলাইনের লেনদেন বাড়ছে। সে কারণেই হয় তো এটিএম বুথের সংখ্যা ও লেনদেন কমে থাকতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বর শেষে কার্ডের (ক্রেডিট, ডেবিট, প্রিপেইড) সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৯৩টি। আর এসব কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় চার হাজার ৯৩ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হারে কমে গিয়েছিল সক্রিয় কার্ডের সংখ্যা ও লেনদেন। সেই সংকট কাটিয়ে ফের বাড়তে শুরু করেছে লেনদেনের পরিমাণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাই এখন খরচ কমানোর চিন্তায় আছে। এখন ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করেই সব কাজ করা যায়। যেমন মোবাইল রিচার্জ, গ্যাসের বিল প্রদান, বিদ্যুৎ বিলসহ বাস ও ট্রেনের টিকিটও কাটা যায়। তা ছাড়া অনেকেই ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা স্থানান্তর করে ব্যবহার করেন। তাই ক্যাশ টাকা সব সময় প্রয়োজন হচ্ছে না। এসবের ব্যবহার যত বাড়বে এটিএমের প্রয়োজনীয়তা কমবে। অন্যদিকে এটিএম বুথ একটি ব্যয়বহুল প্রজেক্ট। এখানে মেশিন বসাতে হয়, জায়গার ভাড়া, এসি, ২৪ ঘণ্টা প্রহরী ইত্যাদি। কিন্তু অনলাইন ব্যাংকিং বা কিউআর কোড ব্যবহার করে যখন কেউ সব ধরনের বিল পরিশোধ করতে পারবে সে খুব স্বভাবিকভাবেই ক্যাশ লেনদেন করবে না। আগামী ১০ বছরে এটিএম বুথের সংখ্যা আরো কমে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।