সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। সোমবার (৩ মার্চ) দুদকের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বাদী হয়ে খুলনা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণ চন্দ্র চন্দের স্ত্রী ঊষা রানী চন্দের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এই মামলায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দকেও আসামি করা হয়েছে। এ মামলাটি দায়ের করেছেন দুদক খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র। মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয় হিসাবে পাবলিক সার্ভেন্ট থাকা অবস্থায় অসাধু উপায়ে নিজ নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দের নামে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার ১৬৬ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৩ কোটি ৫০ লাখ ২ হাজার ৫৬৬ টাকা মূল্যের সম্পদ পাওয়া যায়। এ সময়ে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৩ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৮ টাকা এবং পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯ টাকা। এই ব্যয় ব্যতীত সম্পদ অর্জনের জন্য নিট আয়/সঞ্চয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৯ টাকা। সে মোতাবেক নারায়ণ চন্দ্র চন্দের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকা। এ অবস্থায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা করেন। অপরদিকে জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা আরএকটি মামলায় সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের স্ত্রী ডুমুরিয়া রাজিবপুর মৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঊষা রাণী চন্দকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এতে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে নারায়ন চন্দ্র চন্দকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি উষা রাণী চন্দের নামে ১ লাখ টাকার স্থাবর ও ১ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার ২৩৮ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত সময়ে তার দায়-দেনার পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দায়-দেনা বাদ দিয়ে আসামি ঊষা রাণী চন্দের নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার ২৩৮ টাকা। ওই সময়ে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৬০ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৯ টাকা এবং পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ ১২ লাখ ৩২ হাজার ২২২ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাদে তার নিট আয়/সঞ্চয়ের পরিমাণ ৪৮ লাখ ৭ হাজার ২৭ টাকা। অর্থাৎ, আসামি ঊষা রাণী চন্দ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ২১১ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ অবস্থায় আসামি ঊষা রাণী চন্দ ও সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ২১১ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।