শিরোনাম

ইলিশের লিঙ্গান্তরের রহস্য উন্মোচন

 প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন   |   রাজনীতি

ইলিশের লিঙ্গান্তরের রহস্য উন্মোচন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও চীনের সাংহাই ওশান ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট অব হাইড্রো-বায়োলজির একদল গবেষক যৌথভাবে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ সম্পর্কিত তিনটি গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেছেন। গবেষণা তিনটি হলো- ইলিশের সেক্স রিভার্সাল, কমপ্লিট জিনোম এবং পপুলেশন জিনোমিক্স। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে এক সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।  এই গবেষণার ফল উপস্থাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা এবং বঙ্গোপসাগরের ছয়টি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন আকার ও বয়সের মোট ২০৩টি ইলিশ মাছ সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত সাতটি ইলিশের জনন টিস্যুতে একসাথে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সহাবস্থান দেখা যায় যা লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রমাণ বহন করে। গবেষণার সামগ্রিক ফলাফল থেকে অনুমান করা যায়, ইলিশ মাছ জীবনের প্রথম বছর পুরুষ হিসেবে প্রজনন সম্পন্ন করে খাদ্যের সন্ধানে সমুদ্রে অভিপ্রয়াণ করে। সেখানে অবস্থানকালে উক্ত ইলিশ ধীরে ধীরে স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয় এবং দ্বিতীয় বছর প্রজননের উদ্দেশ্যে পুনরায় নদীতে ফিরে আসে। এ গবেষণা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্র, প্রজনন কৌশল এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণায় বলা হয়, প্রথমবারের মত ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বা জিনোম সিকোয়েন্স  উন্মোচন করা হয় যা অতীতের (ভারত ১টি ও বাংলাদেশের ২টি) তুলনায় অধিকতর সম্পূর্ণ। এ গবেষণায় জিনোম সিকোয়েন্সের পাশাপাশি, সমুদ্র ও নদীর মোট ১৪টি ইলিশের প্রত্যেকটি থেকে নয়টি ভিন্ন ধরনের টিস্যু ব্যবহার করে আরএনএ সংগ্রহ ও সিকোয়েন্স করা হয়। এতে ইলিশের তেলযুক্ত বা সুস্বাদু হওয়ার রহস্য উন্মোচন করা হয়। এই গবেষণা প্রকল্পের সব ডিএনএ ও আরএনএ পাবলিক ডাটাবেজ এনসিবিআইতে সংরক্ষিত আছে। 

এই গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে বাংলাদেশে মাছটির শুধু একটি পপুলেশন পাওয়া গিয়েছে। যা এই পপুলেশনের অস্তিত্বের জন্য একটি বিরাট হুমকি। কেননা কোনো আবহাওয়াগত অথবা দূষণগত দৈব্য দুর্বিপাকে পতিত হলে এই একটি পপুলেশন যদি উতরে যেতে না পারে তাহলে বাংলাদেশে কোন ইলিশ মাছ থাকবে না একাধিক পপুলেশন থাকলে সমস্যা সংকুল পরিস্থিতেও কোনো না কোনো পপুলেশন টিকে থাকত। পাশাপাশি মাছটির জেনেটিক ভ্যারিয়েশন ও খুব কম যেটা অভিযোজনগত ভাবে মাছটি দুর্বল করে তুলেছে। বর্তমানে বর্ধিত ইলিশ উৎপাদন আমাদের পরিতৃপ্ত করতে পারে কিন্তু মাছটি ভয়ংকর রকম অস্তিত্ব সংকট ও অভিযোজনগত দুর্বল অবস্থয় রয়েছে মাছটি সুরক্ষায় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও গণসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

চীনের সাংহাই ওশেন ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ড. কিশোর কুমার সরকার বলেন, ইলিশের এই প্রজনন বিষয়ে গবেষণা করা আমাদের জন্য একটা রিস্ক ড্রাইভ ছিল। নদী ও সমুদ্রের মধ্যে আলাদাভাবে কাজ করে ইলিশের প্রজনন। 

এসময় অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাংহাই ওশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. চিনহংলি বলেন, ইলিশের ওপর এই গবেষণা দীর্ঘদিনের। অনেকের পরিশ্রমের ফলে এই গবেষণা ফলপ্রসূ হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের গবেষকরা যেভাবে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে ইলিশ মাছ নিয়ে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আশা করি ইলিশ মাছ নিয়ে ব্যতিক্রমী এই গবেষণা গুলো জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখবে।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেন, মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক, পরিচালক (গবেষণা) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজনীতি এর আরও খবর: