প্রধান উপদেষ্টার জন্য কালো কুর্তা তৈরির অজানা গল্প

কাতারের রাজধানী দোহায় গত ২২-২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আর্থনা সামিটে (২০২৫) যোগ দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে থাকাবস্থায় পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুসংবাদ শোনেন তিনি। সফরের দ্বিতীয় দিন ঘোষণা আসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিনক্ষণ। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তার দীর্ঘদিনের বন্ধুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
বিপত্তি বাধে পোশাক নিয়ে। শেষকৃত্যে অংশ নিতে হলে কালো পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস বহু বছর ধরে বাংলাদেশের গ্রামীণ চেক কাপড়ে তৈরি কুর্তা পরিধান করে আসছেন। কালো রঙের কুর্তা না থাকায় ভীষণ বিপাকে পড়েন তিনি।
এ অবস্থায় তার ব্যক্তিগত সহকারীরা দোহা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও সাধারণ বাজারে কুর্তা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর এক দোকানে পাওয়া যায় উপমহাদেশ থেকে আগত এক দরজি, যিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দ্রুত কুর্তা তৈরি করে দেন। ওই দর্জির কাছে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে (৫ হাজার টাকায়) কালো রঙের কুর্তা বানিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সেই অজানা গল্প তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমরা তখন কাতারে, যেখানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস Earthna Summit-এ (আর্থনা) অংশ নিচ্ছিলেন। কাতারে রওনা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই আমরা শুনেছিলাম পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবর। আমাদের সফরের দ্বিতীয় দিনেই জানানো হয় শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিনক্ষণ। তখন প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেন—এ মহান মানুষটির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তিনি ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং প্রান্তিক জনগণের এক মহান সহযোদ্ধা।
কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায়— শেষকৃত্যে যোগ দিতে হলে কালো পোশাক, বিশেষ করে কালো স্যুট পরে যেতে হয়। অধ্যাপক ইউনূস বহু বছর আগে থেকেই স্যুট পরা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি যেখানে যান, সবখানেই বাংলাদেশে তৈরি গ্রামীণ চেকের কাপড়ে তৈরি কুর্তা পরেন।
আমরা দেখতে পেলাম, তার একটি কালো কোটি আছে, কিন্তু কালো কুর্তা নেই।
তাঁর ব্যক্তিগত স্টাফরা দোহার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ করলেন কালো কুর্তার। কিন্তু যেগুলো পাওয়া গেল, সেগুলোর দাম ছিল অত্যন্ত বেশি। আমরা এরপর সাধারণ বাজারে ঘুরে ঘুরে এমন কোনো দরজি খুঁজতে থাকি, যিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কালো কুর্তা সেলাই করে দিতে পারেন। কিন্তু তেমন কেউ পাওয়া গেল না।
শেষে এক দোকানে এক উপমহাদেশীয় (ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশি) দরজি পাওয়া গেল, যিনি অধ্যাপক ইউনূস সাহেবকে চিনতেন। তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেন—রেকর্ড সময়ে তিনি কুর্তা বানিয়ে দেবেন।
এ বিশেষ কুর্তা তৈরিতে খরচ পড়েছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।